সিলেট নগরীতে বন্যার্ত মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। বাসা-বাড়ি বিশেষ করে বিভিন্ন কলোনীতে পানি ওঠায় লোকজন ছুটছেন আশ্রয়কেন্দ্রে। সিলেট সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে নগরীতে খোলা হয়েছে দুটি আশ্রয়কেন্দ্র।
সোমবার (১৬ মে) সন্ধ্যার পর থেকে সিলেট নগরীতে বন্যার পানি প্রবেশ করতে থাকে। বন্যার পানিতে এরই মধ্যে উপশহর, তালতলা, কানিশাইল এবং দক্ষিণ সুরমার বিভিন্ন এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। পানিবন্দী লোকজন ঘর-বাড়ির জিনিসপত্র সামলাতে গিয়ে পড়েছেন বিপাকে।
মঙ্গলবার (১৭ মে) সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। বেড়েছে নদ-নদীর পানি। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা।
উজানে বৃষ্টি ও ঢল অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কা পানি উন্নয়ন বোর্ডের। ইতোমধ্যে পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন জেলার লক্ষাধিক মানুষ।
মঙ্গলবার সকাল ৯টা পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি সিলেট ও কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার প্রায় দেড় সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যা আগের দিনের চেয়ে বেড়েছে। বেড়েছে কুশিয়ারা নদীর পানিও।
নদীর পানি উপচে সোমবার থেকেই তলিয়ে যেতে শুরু করেছে নগরের বিভিন্ন এলাকা। মঙ্গলবার প্লাবিত এলাকার পানি আরও বেড়েছে। নগরের উপশহর, তেররতন, মেন্দিবাগ, ছড়ার পাড়, সোবহানিঘাট, মাছিমপুর, তালতলা, কালিঘাট, কাজিরবাজার, শেখঘাট, লালাদীঘির পাড়, জামতলাসহ বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে।
সকালে নগরের উপশহর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, অভিজাত এই এলাকার প্রধান সড়কে হাঁটুর ওপরে পানি। পানি ঢুকে পড়েছে আশপাশের দোকানপাট ও এলাকার বাসাবাড়িতেও। পানিতে সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে যান চলাচল।
উপশহরের বি ব্লকের ব্যবসায়ী আজমল আলী বলেন, “দোকানের ভেতরে হাঁটুর ওপরে পানি। কাল রাতেও পানি ছিল না। সকালে এসে দেখি দোকানে পানি ঢুকে সব মালপত্র ভিজে গেছে”।
এই এলাকার বাসিন্দা রোম্মান আহমদ বলেন, “প্রতি মিনিটে পানি বাড়ছে। এত দ্রুত পানি বাড়তে আগে দেখিনি। আমাদের ঘরের নিচতলা তলিয়ে গেছে। আমরা দোতলায় আশ্রয় নিয়েছি”।
সকালে মেয়েকে নিয়ে স্কুলে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হয়েছিলেন মো. কামরুজ্জামান। তিনি বলেন, “বাসা থেকে বের হয়ে দেখি চারদিকে পানি। সড়ক ডুবে যাওয়ায় কোনো যানবাহন চলছে না। তাই মেয়েকে স্কুলে নিয়ে যেতে পারিনি”।
নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়া ও নগরে পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকার কারণে পানিতে নগর তলিয়ে গেছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন সিলেট শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম। তিনি বলেন, “জরুরি ভিত্তিতে নদী খনন করা প্রয়োজন। না হলে প্রতি বছরই এমন দুর্ভোগ পোহাতে হবে মানুষকে”।
বন্যাকবলিতদের জন্য নগরের কিশোরী মোহন ও মাছিমপুর বিদ্যালয়ে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নূর আজিজুর রহমান।
এদিকে বন্যায় আগেই প্লাবিত হয়ে পড়া পাঁচ উপজেলা সিলেট সদর, কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জকিগঞ্জ ও জৈন্তাপুর উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। প্লাবিত হয়েছে নতুন নতুন এলাকা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের উপসহকারী প্রকৌশলী নিলয় পাশা বলেন, “উজানে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে নদীর পানি দ্রুত বাড়ছে। এই বিষয়টা আতঙ্কের। এই সময়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে”।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মুজিবর রহমান বলেন, “বন্যার্তদের মধ্যে খাদ্য সহায়তা বিতরণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত রয়েছি”।
No comments:
Post a Comment